সজিব খান: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা এখনো ভয়ের মধ্যেই রয়েছে। তাদের অতীত অভিজ্ঞতা এখনো নাড়া দেয়। মিয়ানমারে যে ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের হাত থেকে তারা বেঁচে ফিরেছে তা কিছুতেই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। যে কোন জাতি তার নিজ দেশে বসবাস করতে চায় । তাই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। তবে দেশে ফেরার পূর্বে রোহিঙ্গারা রাখাইনের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
তারা বলছে, মিয়ানমারে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও রাখাইনে এখনও সেনাবাহিনী তাদের হত্যাকান্ডও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থায় সেখানে এখনও ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এরপরও বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় রাখাইনে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করলেই মিয়ানমারে ফিরে যাবে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়ায় ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা জেনেছি, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সমঝোতা সই হয়েছে। আমাদের যদি মিয়ানমারে ফেরত যেতে হয়, তাহলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। তাহলেই আমরা ফিরে যাবো। না হলে নয়। আর নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা বাংলাদেশেই মরবো।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে সম্পদ। সম্প্রতি মাঠের পাকা ধানও কেটে নিয়ে গেছে সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করে মিয়ানমারে ফিরবো? সেখানে গিয়ে আমরা কী খাবো? রাখাইনে আগুনের মধ্যে আমাদের ঠেলে দিলে নিশ্চিত মরে যাবো। নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা না পেলে কিছুতেই মিয়ানমারে ফিরে যাবো না।’
একই অবস্থান রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবুনিয়া থেকে আসা ফরিদা বেগমেরও। তার ভাষ্য, ‘আমাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারকে ধোঁকা দিচ্ছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের সবাই মিথ্যাবাদী। প্রতি মুহূর্তে মিথ্যা ও প্রতারণা করাই তাদের ধর্ম। আজ এক কথা বলে তো, কাল আরেক কথা বলে।’
এছাড়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু শর্ত দিয়েছেন। তারা বলছেন, আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিবার-পরিজন, আত্বীয় স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে। এতে আমাদের অপূরণীয় যে ক্ষতি হয়েছে, সেসব কিছুর ক্ষতিপূরণ চাই। চাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিত নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব। এসব কিছুর নিশ্চয়তা না দিলে আমরা ফিরবো না।’
উল্লেখ্য যে, গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনায় সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৬ জন রোহিঙ্গা। এর আগে ২ লাখ ১২ হাজার ৫১৮ জন রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ নতুন-পুরনো মিলিয়ে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৪ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।